খুলনার কয়রা উপজেলায় ভুয়া কাগজপত্র ও রেজুলেশনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ এর ঘটনা ঘটেছে। ভুয়া রেজুলেশনের মাধ্যমে স্কিমের আওতায় বিতরণকৃত পণ্যের খুচরা মূল্যের চেয়ে অন্তত ১৫ গুন বেশি বিল উত্তোলন করা হয়েছে। উপজেলার কয়রা ইউনিয়নের ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের দ্বিতীয় পর্যায়ের স্কিমগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
কয়রা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের দ্বিতীয় পর্যায়ে দশ লাখ ৬৩ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ আসে। এই বরাদ্দ থেকে কয়রা আছিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের জন্য দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি এবং প্রকল্প তদারকি কমিটির মিটিং ছাড়াই ভুয়া রেজুলেশন এর মাধ্যমে প্রকল্পের বিলের অনুমোদন দেয়া হয়। উক্ত কমিটিতে যাদেরকে রাখা হয়েছে তাদের অধিকাংশই কাজের বিষয় কোনো কিছু জানেন না। এছাড়া পণ্য ক্রয়ে মেসার্স ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ নামক যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দরপত্র গ্রহণ দেখানো হয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানও কিছু জানেন না।
মেসার্স ফয়সাল এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটার মোঃ মনিরুজ্জামান মনু বলেন, “আমি এই স্কিম সম্পর্কে জানি না। আমি কয়রা ইউনিয়নে কোন স্যানিটারী ন্যাপকিন সরবরাহ করি নাই।
সরেজমিন কয়রা আছিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় যেয়ে শিক্ষক ও ছাত্রীদের সাথে কথা বলে এবং স্কিমের কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, তৎকালীন কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাস কর্তৃক মনোনীত স্কীম তদারকি কমিটি- এসআইসি কমিটির কারিগরি কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আফজাল হোসেন ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ লুৎফর রহমান সরদার স্বাক্ষরিত বিভিন্ন কাগজপত্রে স্যানিটারি ন্যাপকিন গ্রহণের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১১৭৫ প্যাকেট এবং প্রতি প্যাকেটের মূল্য দেখানো হয়েছে ২০০ টাকা। অথচ আছিয়া খাতুন মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয় মাত্র ৩০০ প্যাকেট। যার প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে খুচরা মূল্য লেখা মাত্র ৩৫ টাকা। ১৫০ জন ছাত্রীর মধ্যে এসব বিতরণ করা হয়। প্রতিজনকে দুই প্যাকেট করে প্রদান করা হয়। পাশাপাশি প্রত্যেককে ১২ টাকা মূল্যের একটি করে মিনি লাক্স সাবান প্রদান করা হয়, যার তথ্য প্রকল্পের কাগজপত্রের কোথাও উল্লেখ নেই।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ‘জয়া’ নামের দুই প্যাকেট ন্যাপকিন দেওয়া হয়। প্রতিটি প্যাকেটে ৫ পিস প্যাড ছিল। প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে খুচরা মূল্য লেখা ছিল ৩৫ টাকা। আর একটি মিনি টয়লেট সবান দেওয়া হয়।
আছিয়া খাতুন মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের প্রতিষ্ঠানে ৩০০ প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ১৫০ পিস ছোট টয়লেট সাবান প্রদান করেন। সেগুলো শিক্ষার্থীদের মাঝে বন্টণ করা হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।
আছিয়া খাতুন মহিলা দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রীদের মাঝে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের প্রকল্পের প্রকল্প তদারকি কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য মোস্তফা শফিকুল ইসলাম খোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
প্রকল্প তদারকি কমিটির সদস্য সচিব উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, “উন্নয়ন তহবিলের প্রকল্পগুলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফাইলের সব কাজ শেষ করে আমার কাছে পাঠানো হয়। আছিয়া মাদ্রাসায় পণ্য বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলাম না। বিস্তারিত কিছু জানিও না। মাস্টার রোল দেখে উনাদের কথা মত ফাইলে স্বাক্ষর করি।”
কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মোঃ লুৎফর রহমান সরদার খুলনা গেজেটকে বলেন, “এ প্রকল্প বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছি।”
ন্যাপকিনের বাড়তি দাম ধরার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, “এ কাজটি করতে বাধ্য হয়েছি।”
খুলনা গেজেট/এনএম

